গোয়েন্দা পুলিশ আমাকে মারধর করেছে বললেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম

বাসা থেকে তুলে এনে গোয়েন্দা পুলিশ মারধর করেছে বলে অভিযোগ করেছেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। তথ্য প্রযুক্তি আইনে করা মামলায় রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে এই অভিযোগ করেন তিনি।
আগের রাতে ধানমন্ডিতে নিজ বাসভবন থেকে আটকের পর সোমবার বিকালে শহীদুলকে আদালতে তুলে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। অন্যদিকে তার পক্ষে করা হয় জামিন আবেদন। পরে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে শহিদুলকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে কড়া নিরাপত্তা ও পুলিশি পাহারার মধ্যে খালি পায়ে শহিদুলকে এজলাসের সামনে আনা হয়।
এ সময় শহীদুলের আইনজীবী সারা হোসেন ও জোতির্ময় বড়ুয়া জামিনের আবেদনের শুনানি করে তাকে কীভাবে ‘নির্যাতন করা হয়েছে’ তা বলার সুযোগ দেয়ার দাবি জানান।
শহিদুল হক আদালতকে বলেন, ‘ডিবি পুলিশ আমাকে বাসা থেকে তুলে এনে অত্যাচার করেছে। আমার নাকে আঘাত করা হয়েছে। রক্ত গড়িয়ে পুরো পাঞ্জাবি ভিজে গেছে।’
রবিবার রাতে শহিদুলকে তার বাসা থেকে তুলে নেয়া হয় অভিযোগ করে আসছিল পরিবার। সোমবার সকালে তার স্ত্রী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক শিক্ষক রেহনুমা আহমেদ সাংবাদ সম্মেলন করে তার মুক্তিরও দাবি করেন।
পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম এবং গণসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শহিদুল আলমকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে।
পরে রমনা থানায় তথ্য প্রযুক্তি আইনে করা মামলায় শহীদুলকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। বিকালে ডিবি (উত্তর) পরিদর্শক মেহেদী হাসান বাদী হয়ে রমনা থানায় মামলাটি করেন।
দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম চলমান ছাত্র বিক্ষোভ নিয়ে সম্প্রতি কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। এতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের পেছনে সরকারের ‘দুর্নীতি’, ‘অপশাসন’ দায়ী বলে অভিযোগ করেন।
শহিদুল বর্তমান সরকারে ‘অনির্বাচিত’ দাবি করে এমনও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা জিতবে না। এ জন্যই সরকার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে শক্তি প্রয়োগ করছে।
তবে শহীদুলকে এই সাক্ষাৎকারের জন্য আটক করা হয়েছে কি না, সেটা স্পষ্ট নয়।
পরে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় করা এ মামলায় ‘কল্পনাপ্রসূত তথ্যের’ মাধ্যমে জনসাধারণের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে ‘মিথ্যা প্রচার’ চালানো, উসকানিমূলক তথ্য উপস্থাপন, সরকারকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও অকার্যকর’ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘অবনতি ঘটিয়ে’ জনমনে ‘ভীতি ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে’ দেওয়ার ষড়যন্ত্র এবং তা বাস্তবায়নে ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ‘অপপ্রচারের’ অভিযোগ আনা হয় এই আলোকচিত্রীর বিরুদ্ধে।
ঢাকাটাইমস